MASIGNCLEAN101

মনিবের মেয়ে। পর্ব ০৪ । ভালোবাসার গল্প । Love Story



সে তো তখন আয়ানকে সিরিয়াসলি কথাটা বলেনি। তাহলে আয়ান কেনো সিরিয়াসলি নিলো বিষয়টা। সেতো বিষয়টাকে ন্যাকা ভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলো৷ কিন্তু আয়ান তাকে ভূল বুঝলো। 

এদিকে খাবার শেষ করে আয়ান এসে পরেছে। আজ কেন জানিনা শোয়ার সাথে সাথেই আয়ান ঘুমিয়ে পড়েছে। এদিকে অবন্তির চোখে যেনো ঘুম নেই। আয়ানকে সে কিভাবে আটকাবে? অনেক চিন্তা করতে থাকে অবন্তি। অবশেষে অনেক চেষ্টার পর ব্যর্থ হয় অবন্তি। 

৬ মাস পর। 

আয়ান এখন প্রতিদিন রোজ সকালে অবন্তির আব্বুর সাথে গাড়িতে যায়। হেলপার হিসেবেই ঢুকেছে। অবন্তির আব্বু কিছু তেই রাজি হচ্ছিলো না আয়ানকে এই কাজে নিয়া আসতে। কিন্তু আয়ান এর পিড়াপীড়িতে বাধ্য হয় ।  তাই আয়ান ও এখন সকাল এ বের হয় অবন্তির আব্বুর এবং রাতে অবন্তির আব্বুর সাথেই বাড়িতে ফেরে। এর মধ্যে কেটে যাওয়া দিন গুলিতে আয়ান তার নিজের কাজ নিয়ে ভেবেছে৷ নিজের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো। কিন্তু অবনি শুধু নিজের পড়াশোনা নিয়েই ভাবতো না। আয়ান কে নিয়ে সে প্রচুর ভাবতো। সহজ সরল ছেলেটার প্রেমে পরে গিয়েছে ।  আর অবন্তিত পছন্দটাও এমনি ছিলো। অবন্তি সন্ধার পর থেকেই এখন দুজন মানুষের জন্য অপেক্ষা করে। প্রথমত তার আব্বু এবং আয়ান  ও আয়ানকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে। খুব কম আয়ানের সামনে আসে। 


এদিকে আয়ান প্রতিদিন সকাল ভোরে ঘুম থেকে গাড়িতে যায়। এবং মাঝ রাতে বাড়িতে ফেরে। দিনটা যেনো রাস্তা আর নতুন নতুন গাড়ি দেখতে দেখতে পেরিয়ে যায়। মাঝে প্রকৃতি দেখে গাড়িতে বসে থেকে। আর মাঝে মাঝে একম মনে মনোযোগ দিয়ে অবন্তির আব্বুর গাড়ি চালানো দেখে। এভাবেই কেটে যায় তার দিন গুলো। সে হেল্পারের মুজুরি পায়। অনেক টাকা গুছুইয়েছে আয়ান। অবন্তির আব্বু তাকে দিন মুজুরি বাদেও অরো টাকা দেয় খাওয়ার জন্য। কিন্তু আয়ান নিতে না চাইলেও জোড় করে দিয়ে দেয়। আয়ান সেই টাকাটা না খেয়ে জমানো শুরু করে। শুরু হয়ে যায় আয়ান এর জীবন এর অধ্যায়। 


আয়ান একটা ছোট্ট কৌটায় টাকা জমাতো। একদিন ছুটির দিন সে কৌ টার টাকা গুলা বের করে।  এবং গুনে দেখে অনে টাকা হয়ে গেছে সেখানে। প্রায় ২০ হাজার এর কাছাকাছি। মনের মাঝে একটা অন্য্রকম আনন্দ কাজ করে। নিজেত ইনকামের প্রথম টাকা। আজ আয়ানের বাবা-মার কথা খুব মনে পড়ছে। অথচ সে তার বাবা - মাত এতটাই ক্ষুব্ধ যে এতদিন একটা বারো তার বাবা-মার কথা মনে পরেনি৷ অথচ আজ কেনো জানিনা খুব মনে পড়ছে তাদের কথা। আজ আয়ানের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে দেখো মা দেখো তোমার ছেলে আজ নিজেই ইনকাম করে৷ আজ আয়ানের খুব ইচ্ছে হচ্ছে নিজের টাকায় আব্বু আম্মুকে নতুন যদি পোশাক কিনে দিতে পারতো। আজ খুব মনে পড়ছে আয়ানের আব্বু আম্মুর কথা। আয়ান বাজারে যাওয়ার নাম দিয়ে বের হয়। এরপর মার্কেট যায়। গিয়ে একই রকমের দুটি পাঞ্জাবি দুটি শাড়ি আর একটি কালো বোরকা আর একটি নীল হিজাব কিনে। এরপর কিছু টাকা টাকা বাচলে একটা এন্ড্রয়েডে ফোন আর একটা মেমরি কিনে। এরপর বাসায় যায় আয়ান। 


বাসায় এসে কাকা-কাকি ( অবন্তির আব্বু-আম্মুকে )   কে জোড়ে জোড়ে ডাকে।তারা দুজনেই ডাকএউনে হকচকিয়ে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসলে আয়ান অবন্তির আব্বুকে পাঞ্জাবি অবন্তির আম্মুকে শাড়ি দেয়। আর অবন্তির ড্রেসটা অবন্তির আম্মুর হাতে দেয়। অবন্তির আম্মু কিছুটা আবেগি হয়ে পরেন। অবন্তির আম্মুর দুচোখ বেয়ে পানি বেরিয়ে আসে। এবং তিনি আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন আজ যদি আমারো একটা ছেলে হতো তাহলে হয়তো তোর মতই হতো রে বাবা। এর পর আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলেন আজ থেকে তুই আমার ছেলেরে বাবা,তুই আমার ছেলে। এরপর যে যার কাজে চলে যায়। আয়ান নিজের ঘড়ে গিয়ে নিজের আব্বু আম্মুর জন্য কেনা ড্রেস টা খুব যত্ন করে রেখে দেয়।  এরপর একটা ঘুম দেয়। দুপুরের দিকে উঠে খাবার ক্ষেতে গেলে  দেখে অন্তি ক্ষেতে বসেছে। কিন্তু  আজকে অবন্তিকে দেখে মনে হচ্ছে অবন্তি কারোর জন্য অপেক্ষা করছিলো। আয়ান চলে আসাতে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। অবন্তিকে খুব খুশী খুশী দেখাচ্ছে। অবন্তি আয়ান কে বলে
- ধন্যবাদ। 
-- কেনো ধন্যবাদ কেনো 
- ওইযে এত্ত সুন্দর একটা বোরকা আর হিজাব গিফট করার জন্য। 
-- ওহ আচ্ছা। 


এই সামান্য কথা টুকু সেরে দুজনেই খাওয়া শুরু করে। অবন্তির আব্বু আম্মুও আছেন। সবাই একসাথে খাবার খাচ্ছে। এমন সময় অবন্তির আম্মু আয়ানকে বলে 
- বাবা আয়ান অবন্তির পরিক্ষা তো এগিয়ে এলো। 
-- জ্বি আন্টি। 
- তুই এ কদিন ওকে একটু সময় দিলে ভালো হতো। 
-- সময় দিলে তো দেওয়া যায়। কিন্তু আমার অন্য একটা ভয় হয়। 
- কিসের ভয়?
-- নাহ আন্টি কিসের ভয়। কিছুর না৷ এমনি বললাম। ওই আরকি 
- ও আচ্ছা। তাহলে বাবা তুই কালকে থেকে গাড়িতে না গিয়ে অবন্তিকে সময় দে?
-- কাকার আবার সমস্যা হবে না?
- নারে। আমার সমস্যা হবে না। বরং আরো ভালো হবে। অবন্তির পড়াশোনা টা এই মুহুর্তে ভালো হওয়া দরকার। আর আমার সমস্যা হলে আমি অবন্তির পরিক্ষা পর্যন্ত একজন কে নিয়া নিবো। ( অবন্তির আব্বু ) 
-- আচ্ছা এখন যাকে পড়াবো তার কোন সমস্যা আছে কিনা একটু জানতে চাই? ( আয়ানের কথাটা শুনে সবাই হেসে ওঠে) 
-- হুম আমার তো কিছু শর্ত আছেই। 
- কি শর্ত বলেন শুনি?
-- আমি আমার মত পড়বো। যখন যেটা পড়তে ইচ্ছা হবে তখন সেইটা পড়বো। 
- আচ্ছা ঠিক আছে। 


এরপর আরো কিছু কথাবার্তা বলে সবাই খাওয়া শেষ করে যে যার যার রুমে যায়। গিয়ে যে যার যার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। আয়ান আয়ানের রুমে গিয়ে অনেক দিন পর ভাবছে অবন্তির কথা। মেয়েটা হাসিখুশী থাকলে কত সুন্দর দেখতে লাগে। যেনো সাক্ষাত পরী। এদিকে অবন্তি ভাবছে আয়ানকি তাকে নিয়ে একটুও ভাবে?এবং অবন্তি বেশ খুশী। কাল থেকে আয়ানকে সে সবসময় সামনে দেখতে পারবে।অনেক খুশী খুশী লাগছে অবন্তির। প্রিয় মানুষটাকে এখন থেকে পাশে পাশেই পাবে৷ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে৷ এদিকে আয়ান ও অবন্তির কথা ভাবতে ভাবতে খুমিয়ে যায়৷ 


কিছু সময় আগে পরে দুজনেরি ঘুম ভাঙে। আয়ান আগে ঘুম থেকে উঠে। উঠে তারপর ফ্রেশ হয়ে গিয়ে টিভি রুমে গিয়ে টিভি দেখতে শুরু করে৷ এরপর অবন্তিও ঘুম থেকে উঠে। তারপর গিয়ে সে আয়ান কে টিভি দেখতে দেখে সেও টিভি রুমে গিয়ে দাঁড়ায়। আয়ান অবন্তিকে দেখে বসতে বলে। 
-- বসো। 
- হুম। কি দেখেন?
-- আহট। 
 - বাবাহ
-- ভয় পাও নাকি? 
- একটু। 
-- তাহলে চেঞ্জ করি কি বলো? 
- হুম। করলে আমিও দেখতে পেতাম আর কি। আর আপনি আহট দেখলে আমি টিভি দেখবো না৷ 
-- আচ্ছা তাহলে রিমোর্ট নেও। তোমার যেটা ভালো লাগে দেখো৷ 
- আপনি দেখবেন না?
-- দেখবো। তবে তুমি যেইটা দেখবা?
- আচ্ছা দেন৷  এই বলে অবন্তি রিমোর্ট টা নিয়ে চ্যানেল টা চ্যাঞ্জ না কিরে আবার আয়ান কে দিয়ে দেয়। 
-- কি হলো দিয়ে দিলে যে?
- আরেহ আপনি তো একটা পোগ্রাম দেখছেন এটা শেষ না হলে কি কিরে চেঞ্জ করি বলুন?
-- আচ্ছা। 
- হুম। 
-- ভয় পাবা না?
- নাহ৷ আমি দেখবো না। আপনি ওইটা দেখেন আর আমি আপনাকে দেখি। 
-- মানে?
- মানে বুঝতে হবে না। 
-- ঠিক আছে। 

এভাবেই চলতে থাকে তাদের খুনশুটি। আয়ান এবং অবন্তি দুজন দুজনকে এখন অনেকটা ভালোবাসে৷ কিন্তু আয়ান কিছুতেই এগুতে চায় না অথচ অবন্তি মাঝে মাঝেই প্রকাশ করে। তবে সরাসরি প্রকাশ না করলেও কথার মধ্যে বুঝিয়ে দেয়৷ কিন্তু আয়ান বিষয়টা এরিয়ে চলে। কি করবে সে? রিলেশন এ গেলেতো অবন্তির আব্বু-আম্মুর সাথে বিষয়টা প্রতারণা হয়ে যাবে তাই আর এগোয় না আয়ান। 

এরপর তাদের প্রতিদিনের মত নিত্য প্রয়জনীয় কাজ দিয়ে কেটে যায় সেই দিনটি।

পরের দিন আয়ান আর গাড়িতে যায়নি। আজ থেকে নতুন একটা চাকরি পেয়েছে আয়ান। অবন্তির পড়াশোনা করাতে হবে। সকালের খাওয়া দাওয়া করে আয়ান অবন্তির সাথে ড্রয়িং রুম এ গিয়ে বসে। অবন্তিকে বই আনতে বলে। কিন্তু অবন্তি আড় ধরে সে ড্রয়িংরুমে পড়বে না। সে নিজের রুমে চেয়ার টেবিলে বসে পড়বে। আয়ানকেও সেখানে গিয়ে পড়াতে হবে। আয়ান ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রাজি হয়ে যায়। এরপর অবন্তির পেছন পেছন অবন্তির তুমে যায়৷ রুমে ঢুকেই যেনো অবাক হয়ে যায় আয়ান। এই বিশাল বাড়ির এই একমাত্র রুম যেটায় আয়ান আজ প্রথম ঢুকলো। এটা যেনো রুম না। ছোট খাটো একটা কমিউনিটি সেন্টার৷ এত্তসুন্দর করে সাজানো একটা ঘর। 

-- আচ্ছা এটা কি কোন কমিউনিটি সেন্টার?
- কেনো? দেখে কি তাই মনে হচ্ছে?
-- হুম। 
- কিহ আমার রুম কে কমিউনিটি সেন্টার মনে হচ্ছে?
-- আরেহ আমি বলতে চাইছি যে এই ঘড় টা এত্ত সুন্দর যে কমিউনিটি সেন্টার মনে হচ্ছে। 
- ওহ তাই বলেন। 
-- তা এত্ত সুন্দর করে সাজালো কে? 
- কে আবার আমি নিজেই সাজিয়েছি। 
-- বাব্বাহ। 
- কেনো বিশ্বাস হয় না?
-- নাহ ঠিক তা না। 
- আপনি বললে আপনার ঘড় টাও সাজাই দিতে পারি কিন্তু৷ 
-- নাহ থাক আপনার আমার ঘড় সাজাইতে হবে না। আপনার সামনে পরিক্ষা আগে পড়াশোনা সাজান। তারপর। আর আমার ঘড় টা তো একবারে আমার নিজের  না। সাজিয়ে কি হবে?  সারাজীবন তো আর এখানে থাকবো না। একদিন তো নিজেকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করতে হবে। 
- তাড়াতাড়ি করুন না। তাহলে খুব ভালো হয়। 
-- মানে তাড়াতাড়ি মানে?
- মানে তাড়াতাড়ি একটা কিছু করলে তো তাড়াতাড়ি একটা বিয়ে করতে পারবেন। তাছাড়া তো কোন বেকার ছেলের হাতে কোন মেয়েই তার বাবাকে তুলে দিবে না। ছেলে যতই ভালো হোক না। 
-- যার বিয়ে তার খোজ নাই পাড়া পর্শির ঘুম নাই। আমার বিয়ে নিয়ে আমি এখনো ব পর্যন্ত ভাবলাম না আর তুমি দেখছি পুরো বিয়ে নিয়ে ভেবে রেখেছো। 
- হা হা হা। 
-- তা আমার বিয়ের পাত্রি টা কে হবে শুনি। 
- কেনো আমি ( মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় অবন্তির) 
-- মানে ?
- অবন্তি লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে যায়। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। কি অপরূপ লাগে তাকে লজ্জা পেলে?  আয়ান আরেকবার ক্রাশ খায় অবন্তিকে দেখে। কিন্তু বিবেকের কাছে আবারো হেরে যায়। তাই কথা না বাড়িয়ে পড়াশোনা নিয়ে কথাবার্তা শুরু করে আয়ান৷ 

এভাবেই প্রতিদিন যায় রাত আসে এবং রাত যায় দিন আসে। আয়ান প্রতিদিন দিনের বেশিরভাগ সময়টা ব্যায় করে অবন্তির সাথে। 

হঠাৎ একদিন পড়াতে গিয়ে আয়ান চমকে যায়। আয়ান যেটা আশা করেনি সেটা ঘটে তার সাথে?

Share This :
  আল-ফাত্তাহ্

আমি একটি সাধারণ পরিবারের, অতি সাধারণ ছেলে। লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। এবং আরো ভালো লাগে যদি আমার লেখা পড়ে কেও উপকৃত হয়৷

:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
-_-
(o)
[-(
:-?
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
$-)
(y)
(f)
x-)
(k)
(h)
(c)
cheer
(li)
(pl)