MASIGNCLEAN101

মনিবের মেয়ে। পর্ব ০২ । ভালোবাসার গল্প । Love Story





ড্রাইভার কাকা-- কিরে মা তোর মা ঘুমিয়ে গেছে?
মেয়েটা-- হ্যা আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে গিয়েছে। আব্বু ও কে?
ড্রাইভার কাকা-- চল মা ভেতরে চল তার পর বলছি এ কে?আয়ান এটা আমার মেয়ে। ওর নাম অবন্তি।
আয়ান -- আয়ান একটি লাজুক ছেলে। সে তেমন একটা মেয়েদের দিকে তাকায়না। কখনো ভাবেনি কোন মেয়েকে নিয়ে। কিন্তু আজ অবন্তিকে দেখেই প্রেমে পড়ে গেলো সে অবন্তির । 


এবার আয়ান ভেতরে যায়। গিয়ে ভেতরের পরিবেশ দেখে আরো অবাল হয়। এ যেনো রাজ প্রাসাদ। সে যেনো এক রাজ প্রাসাদে প্রবেশ করলো। এর পর অবন্তি তাকে ফ্রেস হওয়ার জন্য ট্যাব দেখিয়ে দিলো। এবং ফাত্তাহ গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় অবন্তি তাকে গামছা এনে দিলো। আর আয়ান গামছা নেওয়ার সময় অবন্তির দিকে আবার তাকালো। এবং ওর দিকে তাকিয়ে যেনো ফাত্তাহ চোখ ফেরাতে পারছে না। তাই অবন্তির দিকে তাকিয়েই আয়ান গামছাটা ওর হাত থেকে নিলো। এবং হাত মুখ মুছলো। এখনো দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।এমন সময় অবন্তির আব্বু মানে ড্রাইভার কাকা টয়লেট ঠেকে বেরিয়ে এসে আয়ান কে বললো 


অবন্তির আব্বু-- ফ্রেস হয়েছো বাবা ?
আয়ান - জ্বি কাকা। 
অবন্তির আব্বু-- মা ওকে গামছা দিয়েছিস। 
অবন্তি - হ্যা আব্বু দিয়েছি। 
অবন্তির আব্বু- চলো বাবা খেতে চলো। মা আমাদের দুজনকেই খেতে দে? 
অবন্তি- আচ্ছা আব্বু আসো তোমরা। 


কথাগুলা শেষ করেই অবন্তির আব্বুর পেছন পেছন আয়ান ডায়নিং টেবিলে যায়। গিয়ে অবন্তির আব্বুকে বলে, 
আয়ান- কাকা আমি খাবো না। 
অবন্তির আব্বু-- কেনো ?
আয়ান - কাকা আমার তো পেট ভরা। 
অবন্তির আব্বু - তো কি হয়েছে...? আসো সামান্য একটু খাও। 
আয়ান- না কাকা প্লিজ জোড় করবেন না। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। 
অবন্তির আব্বু- আরে বেডা বারা ভাত থুয়ে উঠে যেতে নেই। আমার মা তোমার জন্য ভাত বেরেছে। অল্প করে খেয়ে নেও। 
আয়ান - আচ্ছা কাকা। 


এরপর আয়ান খেতে বসে। আর খেতে বসেই অবন্তির আব্বু শুরু করে দেয় গল্প 
-- বাবা জানো এটা আমার মেয়ে না। এটা আমার মেয়ে। 
-- হুম। 
-- আমি যতক্ষন বাড়িতে না আসবো আমার মা ঘুমাবে না। আমি যতক্ষন বাড়িতে না আসবো ততক্ষন সে ঘড়ে বসে পড়বে। যখনি আমি বাড়ির সামনে এসে হর্ন দিবো তখন আমার মা পড়া শেষ করে বাড়ির গেইটে এসে দাঁড়াবে৷ কোন দিন আমি ডাকদিলে দরজা খুলবে আবার কোন দিন যখন ১০০% সিউর হয়ে বুঝতে পারবে আমিই এসেছি সেদিন এসে আগেই দরজা খুলে এগিয়ে যাবে আমার কাছে। 
-- বাব্বাহ। তাহলে তো কাকা আপনার কপাল অনেক ভালো। আপনার মেয়ে আপনাকে অনেক ভালোবাসে। 
-- হুম। আমার মেয়ে তো আমার কাছে আমার মা। ( অবন্তি ওর আব্বুর পিঠ ধরে দাঁড়িয়ে আছে ) 
-- কাকা বাড়িতে কি আপনারাই থাকেন?
-- নাহ, তোমার কাকি ঘুমিয়েছে। সারাদিন বাড়ির সব কাজ কাম করে তো। তাই ক্লান্ত হয়ে যায়। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে। আর আমার মা তো আছেই তাই আমাকে খাবার নিয়া চিন্তা করতে হয়না। আমার মাই আমাকে প্রতিদিন খাবার বেড়ে দেয়। 
-- অহ। 
-- মা খেয়েছিস তুই?
-- হ্যা আব্বু খেয়েছি ( অবন্তি ) 


এরপর আয়ান এবং অবন্তির আব্বু খাওয়া শেষ করে। এবং এর মধ্যেই বিভিন্ন কথাবার্তা বলে তারা৷ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যেনো আয়ান এবং অবন্তির আব্বু খুব ঘনিষ্ট হয়ে গেছে। যেনো আসলেই তারা চাচা ভাতিজা। এর একটি প্রধান কারণ হলো আয়ান এবং অবন্তির আব্বু এবং অবন্তিদের পরিবারের সবাই অনেক নম্র ভদ্র। এবং তারা উভয় অনেক সহজসরল। তারা অতিথিদের অনেক সম্মান করে। আর পর মানুষনে খুব সহজেই আপন করে নেয়। তাই তাদের সাথে আয়ানের সম্পর্কটাও খুব ভালো হয়ে গিয়েছে। খুব অল্প সময়ে। 


এরপর খাওয়া শেষে অবন্তির আব্বু তাদের গেষ্ট রুমটি আয়ানকে দেখিয়ে দেয়। এবং বলে সেখানেই রাত্রি যাপন করতে। আয়ান সেখানে ঘুমানোর শুয়ে পড়ে।এদিকে অবন্তি থালাবাসন গুছিয়ে তারপর ঘুমাতে যায়। আর অবন্তি ঘুমাতে যাওয়ার পর অবন্তির আব্বু ঘুমাতে যায়।  


আয়ান শুয়ে পড়েছে। কিন্তু তার ঘুম ধরছে না। বাড়ির কথা ভিষন মনে পড়ছে। কিন্তু কি আর করার৷ তার মনএ হচ্ছে সে বাড়ির লোক দের আপন ভাবলেও তার বাড়ির লোক কখনোই তাকে আপন ভাবেনি৷ সেই হোক না তার পিতামাতা। ভাবতে ভাবতেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে৷ ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে আয়ান৷ গহুমের মধ্যে হঠাৎ করেই স্বপ্নে সে একটা মেয়েকে স্বপ্নে দেখে। মেয়েটার ফেস পুরোটা দেখতে পায় না সে। সে শুধু দেখতে পায় মেয়েটার ডাগর ডাগর চোখ দুটি৷ আর ঠোটটি৷ 


এরপর আয়ানের ঘুম ভাঙে খুব সকালে। সআধারণত সবারি নতুন পরিবেশে গেলে ঘুমের সমস্যা হয়। তাই ঘুম দ্রুত ভেঙে যায়৷ আয়ান শুয়েশুয়ে কি যেনো ভাবতে ভাবতে সেই স্বপ্ন টার কথা মনে পরে যায়৷ মনে পড়ে যায় সেই চোখদুটি আর ঠোটটার কথা। আয়ান এই প্রথম একটা অপরিচিত মেয়েকে এভাবে স্বপ্নে দেখেছে। এখন কেমন যেনো মনে হচ্ছে তারকাছে নিজেকেই৷ সে কি কারোর প্রেমে পড়ে গেছে। এরপর সে নিজেকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবতে থাকে। এমন সময় অবন্তির আব্বু এসে দরজায় নক করে।আয়ান বলে উঠে কে?
-- আমি 
-- ওহ কাকা আসেন ভেতরে আসেন৷ 
-- ঘুম ভঙছে কখন?
-- এইতো কাকা মাত্রই। 
-- আচ্ছা। তো একটু পরেই খাবার হলে হলে তোমার কাকি ডাকদিবেনি। তোমার কাকিকে সব বলা আছে তোমার সম্পির্কে। তুমি কোন রকম ইতস্তত বোধ না করে আমাদের তোমার পরিবার লোক ভাববে। আর যখন যেটা প্রয়োজন আমাকে বইলো। আমি দেওয়ার চেষ্টা কিরবো৷ যতদিন তুমি এখানে আছো ততদিন তোমার সকল দায়িত্ব । আর এই নেও ২০০০ টাকা। তোমার তো আপাদত চলার মতও কোন পোশাক নাই৷ আমি অবন্তিকে বলে দিবোনি কলেজ থেকে ফিরে যেনো তোমাকে নিয়ে যেনো বাজারে মার্কেটে যায়৷ তুমি সেখানে গিয়ে তোমার ইচ্ছে মত পোশাক কিনে নিও। আমি গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছি। আজ একটা ছোট ট্রিপ আছে। তাই আল্লাহ ফেরালে তাড়াতাড়ি ফিবো ইনশাআল্লাহ । থাকো বাবা। 
-- জ্বি কাকা। 


কথা গুলা বলেই অবন্তির আব্বু গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়। এবং কিছুক্ষন পর আয়ানের মার বয়সি একজন মহিলা কই বাবা বলে রুমে ঢুকে। আয়ান বুঝতে পারে এটাই অবন্তির মা। আয়ান সালাম দেয় । তিনি সালাম নেন। 
-- তুমই আয়ান?
-- জ্বি চাচি। 
-- আচ্ছা বাবা । আমার কোন ছেলে নেই। তুমি আমার ছেলেরই মতই। আমার একটা মাত্রই মেয়ে। আর আজ থেকে তুমি আমার ছেলে। 
- আয়ান জ্বি চাচি।
-- চলো বাবা খেতে চলো। 
-- আচ্ছা চাচি আপনি যান আমি ফ্রেস হয়ে আসতেছি।
-- আচ্ছা বাবা আসো। 


অবন্তির মা চলে যায়। আয়ান বসে বসে ভাবে এই পৃথিবীতে এখনো ভালোমানুষ আছে। যারা সার্থ ছাড়াই কাউকে ভালোবাসে। এরপর সে উঠে ফ্রেস হয়ে ক্ষেতে যায়। গিয়ে চমকে যায়। গিয়ে দেখে অবন্তি গোসল করে স্কুল ড্রেস পরে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। তাকে এতটাই সুন্দর দেখাচ্ছে যে আয়ান কিসের সাথে তার তুলনা করবে সেটা সে খুজে পাচ্ছে না। আয়ান হঠাৎ সেই স্বপ্নে দেখা চোখ আর ঠোট এর সন্ধান পেয়ে গেলো। ওগুলো অবন্তির চোখ আর ঠোট এর সাথে হুবহু মিলে গেছে। কিন্তু আয়ান হঠাৎ করেই চুপসে যায়। অবন্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ করে আয়ানের চুপসে যাওয়া দেখে অবন্তি বুঝতে পারে যে আয়ান এতক্ষন তাকে অন্য রকম দৃষ্টিতে দেখছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই আয়ান কেমন যানি চুপসে গেলো। আয়ানের হঠাৎ চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে অবন্তিও কিছুটা মন মরা হয়ে গেলো। 


এরপর আয়ান এসে টেবিলে বসলে অবন্তির মা আয়ান এবং অবন্তি দুজনকেই একসাথে ক্ষেতে দেয়। আয়ান এবং অবন্তি একই টেবিলের সামনা সামনি বসে খাচ্ছে। এবং কিছুক্ষন পর পর দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। যখন দুজনেরি চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছে তখনি দুজন মিটমিটিয়ে হাসছে। এরপর অবন্তি কিছুটা লজ্জা পেয়ে অর্ধেক খাবার থুয়েই উঠে যায়। বিষয়টিতে আয়ান এর খারাপ লাগে। আয়ান নিজেকে দোষী কিরে ভাবে মেয়েটার নিশ্চই এতটুকু ক্ষুধা থেকেই যাবে। এই কথা ভেবে আয়ান আস্তে আস্তে খাবার গুলো শেষ করে উঠে ঘড়ে যায়৷ গিয়ে খাটের সাথে হেলনা দিয়ে শুয়ে থাকে। এরপর সে শুয়ে শুয়ে সময় কাটাতে পারতেছিলো না৷ কি করবে ভাবছিলো৷ একটু লাজুক টাইপের জন্য চাইলেও অবন্তির মার সাথে একটু কথা বলে সময় পার করার সাহস পাচ্ছিলো না৷ কিছুক্ষন পর অবন্তির মা নিজেই এলো৷ 


-- কি করো বাবা...
-- এইতো আন্টি আসেন৷ বসে আছি কি করবো বুঝতেছিনা। 
-- হুম। কি আর করবা এখন। আচ্ছা আমরা বরং একটু গল্প গুজব করি। 
-- জ্বি আন্টি।
-- তুমি এবার Hsc দিয়েছিলে তাইনা? 
- জ্বি আন্টি৷ 
-- কোন সাবজেক্ট এ যেনো খারাপ আসছে? 
- আন্টি ইংরেজিতে। 
-- তো বাবা ইংরেজীতে ভালো করে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিলো। 
- আন্টি আমার ইংরেজি পরিক্ষা খুব ভালো হয়েছিলো। হয়তো রেজিস্ট্রেশন বা রোল নম্বর এ সমস্যা হয়েছে। আমি কিছুতেই ফেইল করবো না আন্টি৷ 
-- ওহ৷ আচ্ছা তাহলে তুমি যে কদিন আছো অবন্তিকে একটু পড়াতে পারবা বাবা..?
- জ্বি আন্টি। ভালোই হবে। তাছাড়া এমনিতে তো আমার সময় কাটে না। ওকে পড়ালে ওই সময়টুকুও তাও কেটে যাবে। 
-- হা বাবা। বাবা ও সব দিক দিয়ে খুব লক্ষি। কিন্তু পড়াশোনা করতে চায় না। তাছাড়া ওর সামনে Ssc পরিক্ষা৷ 
- ওহ তাহলে তো আমারো সেই জুলুম হয়ে যাবে ( ইয়ারকি করে ) ফাত্তাহ এই কথা বলার পর দুজনেই হেসে দেয়। 
-- আচ্ছা বাবা। বাবা আমার কিছু হাতের কাজ করতে হবে । আমজ কাজ গুলো সেরে নেই। তুমি ততক্ষন ড্রয়িংরুম এ গিয়ে টিভি দেখে সময় কাটাও৷ 
- আচ্ছা আন্টি৷ 

এই কথা বলে চলে যান অবন্তির আম্মু। এবং আয়ান গিয়ে টিভি দেখতে শুরু করে। কেটে যায় অনেক টা সময়। বেলা ২ টা বেজে গেলে অবন্তি বাসায় এসে কলিংবেল বাজায়। ওর আম্মু কাজে ব্যাস্ত থাকায় আয়ানকে খুলে দিতে বলে৷ আয়ান গিয়ে দরজা খুলে দেয়। খুলে দিতেই অবন্তিকে দেখে সে যে নো ক্রাশ খায়৷ চেহারাতে একটু ক্লান্তির ছাপ। মুখের চারিপাশে হালকা ঘাম এর বিন্দু বিন্দু পানি৷ সামনের একগোছা ভিজা চুল। সব মিলিয়ে যেনো চোখ যেনো সরছেই না। আয়ান কিছুটা ধ্যানে পড়ে গিয়েছে সুন্দরিকে দেখে। অবন্তি বুঝতে পারে আয়ান তার রূপের প্রেমে পড়ে গেছে৷ তাই সে কিছুটা লজ্জা পেয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়৷ আয়ান হাসিটা দেখে আরো পাগল হয়ে যায়। 


ঠিক সেই সময় অবন্তি আয়ানএর ঘোড় কাটিয়ে দিয়ে বলে এই যে মিষ্টার আমাকে কি ঢুকতে দিবেন। নাকি দাড়িয়েই থাকবো৷ আয়ান এর ধ্যান ভেঙে গেলে সে কিছুটা লজ্জা পেয়ে সরে যায় সেখান থেকে। এরপর গিয়ে সে রুমে ঢুকে। ভাবতে থাকে অবন্তির কথা। মেয়েটা কত সুন্দর।সে বুঝতে পারে সে আস্তে আস্তে কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে। সে যে অবন্তির প্রেমে পড়ে যাচ্ছে খুব ভালো ভাবেই উপলদ্ধি করতে পারে। এবং তার মাথায় সাথে সাথে একটা চিন্তা চলে আসে। সে যেটা করছে সেটা কি ঠিক হচ্ছে? এটা তো নুন খেয়ে নুন হারামি করা হচ্ছে। যেই কাকা কাকি তাকে ছেলের মত ভালোবাসে সেই কাকা-কাকির মেয়েকে ভালোবেসে ফেলাটা কি ঠিক হচ্ছে? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে আয়ান৷ 

পরবর্তী পর্ব পেতে সাথেই থাকুন৷ 
Share This :
  আল-ফাত্তাহ্

আমি একটি সাধারণ পরিবারের, অতি সাধারণ ছেলে। লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। এবং আরো ভালো লাগে যদি আমার লেখা পড়ে কেও উপকৃত হয়৷