MASIGNCLEAN101

মনিবের মেয়ে। পর্ব ০৫ । ভালোবাসার গল্প । Love Story




হঠাৎ একদিন পড়াতে গিয়ে আয়ান চমকে যায়। আয়ান যেটা আশা করেনি সেটা ঘটে তার সাথে। অবন্তি তাকে প্রপোজ করে বসেছে। পড়তে পড়তে একটা কাগজ ধরিয়ে দেয় অবন্তি আয়ান এর হাতে। সেখানে লেখাছিলো যেদিন তোমাকে প্রথম দিন দেখেছিলাম ঠিক সেদিন প্রথম দেখাতেই মনে হয়েছিলো আমি আমার খুব পিরিচিত যার সাথে আমার সারাটাজীবন কাটাতে হবে তার দেখা পেয়েগেছি। আর সেই মুহুর্তের পর থেকেই তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা হঠাৎ করেই তৈরি হয়ে যায়। তোমাকে দেখার পর থেকে মনে হচ্ছিলো আমার আমি তোমাকে বহুকাল আগে থেকেই চিনি। শুধু মাঝখানে একটা দুরুত্বে জন্য দুজন দুজনের কাছ থেকে অনেকটা দূরে সরে ছিলাম। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কখনো কাউকে প্রেম পত্র বা চিঠি দেই নি। অনেকদিন অনেক চিঠি লিখেছি কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না দেওয়ার। আর খুব ভয় হচ্ছিলো। আজো প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। তবুও দিয়েই দিলাম। সর্বশেষ একটা কথা বলতে চাই আমি তোমার সাথে আমার জীবনের বাকি দিন গুলো কাটাতে চাই। যেহুত মেয়ে হয়ে জন্মেছি তাই বেচে থাকলে একদিন তো কোননা কোন ছেলেকে বিয়ে করতে হবেই। আর সেই ছেলেটা তোমাকে বানাতে চাই। প্লিজ না করোনা। একবার আমার বুকে হাত দিয়ে দেখোনা হার্টবিট এর অবস্থা কি? প্রচুর হাতপা কাপছে আমার৷ প্লিজ আমি হয়তো না শুনলে স্টক করে ফেলবো? প্লিজ না করো না। 


চিঠিটা পড়েই রীতিমত আয়ান অবন্তির দিকে তাকিয়ে চমকে যায়। মেয়েটার হাত পা ভিষন কাপছে। মেয়েটা যেনো খুব ভয়ে আছে। নিচে পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ভয়ে আর টেনশনে যেনো থর থর করে কাপছে। আয়ানের অবন্তির এই অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছিলো। কিন্তু সে এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়বে কখনোই আশা করেনি। তাই সে অবন্তিকে বলে উত্তর টা পরে দিবো। ভাবতে হবে? আমি এখন গেলাম। তুমি সাভাবিক হলে পড়তে বসো। আর সামনে পরিক্ষা এখন এসব নিয়ে না ভেবে পড়াশোনা নিয়ে ভাবো। এই বলে আয়ান সেখান থেকেই উঠতেই অবন্তি কাপা কাপা আর কাদো কাদো গলায় বলে উঠে যদি 
- যতক্ষন উত্তর টা না পাবো আমি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারবোনা কিন্তু। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো। ( এই প্রথম অবন্তি আয়ানকে তুমি করে বলে ) 
-- দেখো তুমি সব কিছুই জানো। আমার বিষয়টা নিয়ে অনেক ভাবতে হবে। আর এখনি আমি কোন উত্তর দিবো না। 
- তবে কবে পাবো উত্তর টা? 
-- পরিক্ষার পর? 
- তাহলে যে আমার পড়াশোনা কিচ্ছু হবে না। আমি যতক্ষন উত্তর টা না পাচ্ছি ততক্ষন আমি স্বাভাবিক হতে পারতেছিনা। প্লিজ আয়ান দেখো আমার অবস্থা টা আমাকে তুমি যদি এখন পরিক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলো আর যদি না বলো দুটোই আমার জন্য এখন একই কথা হবে। ( অবন্তি সব গুলো কথা কাদো কাদো আর কাপা কাপা কথায় বলছে ) 
-- আয়ান দোটানায় পড়ে গিয়েছে। কি বলা উচিৎ তার এই মুহুর্তে? মেয়েটার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বেশীক্ষন অপেক্ষা করালে আসলেই মেয়েটা স্টক করবে। মেয়েটা খুব নার্ভাজ। আয়ান এতটা নার্ভাজ কখনো কাউকে হইতে দেখেনি। আবার যদি না বলে দেয় সেটিও ঠিক হবে না৷ আয়ান ক্ষনিকের মদ্ধ্যে সিন্ধ্যান্ত নেয় এবং হ্যা বলে দেয়। তাছাড়া কোন উপায় দেখছে না। 
- অবন্তি আয়ানএর মুখে আমি রাজি কথাটা শুনেই চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে জড়িয়ে ধরে আয়ান কে। আয়ান আবারো শক খায়। অবন্তির এমন একটা কান্ড দেখে। অবন্তি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাদছে। আর আয়ান লক্ষ করে মেয়েটা শুধু কাদছে না অনেক কাপছে৷ অবন্তির পুরো শরীর টা আয়ান এর পুরো শরীর কে স্পর্শ করে আছে। অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে আয়ান কে। আয়ান বুঝতে পার অবন্তির পুরো শরীরের প্রত্যেকটা শিরা উপশিরা কাপছে৷ একটুপর প্রচন্ড ঘাম দিতে থাকে অবন্তির। তখনো সে জড়িয়ে ধরে আছে আছে আয়ানকে। আর কেদেই চলেছে। অনেক পরে আয়ান ওর পিঠে হাত বুলাতে থাকে। এভাবে প্রায় ২৫/৩০ মিনিট দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অবন্তি আসতে আসতে স্বাভাবিক হলে তারপর দুজন দুজনকে ছেড়ে দেয়। এরপর বিছানায় গিয়ে বসে।


এরপর আয়ান সেখান থেকে উঠে চলে আসে। আর অবন্তি কিছুটা লজ্জা পেয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়। আয়ান রুমে এসে গভীর চিন্তায় পড়ে যায়। কি করবে সে? মেয়েটা যেই পাগলামি শুরু করেছে সেটা তো মোটেও আয়ান এর জন্য ঠিক না। আয়ান ওর পরিক্ষার কথা চিন্তা করে রাজি হয়েছে। সে মন থেকেও রাজি কিন্তু অবন্তির আব্বু আম্মুর সততা বার বার আয়ানের বিবেককে বাধা দিচ্ছে। যা হবার হবে আয়ান সিন্ধান্ত ওর পরিক্ষা পর্যন্ত ভালোবাসার নাটোক টা চালিয়ে যাবে। এরপর ওকে সব কিছু খুলে বলবে কিন্তু ও রাজি না হলে আয়ান এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরিক্ষা টা পর্যন্ত অভিনয় টুকু চালিয়েই যেতে হবে। 


প্রতিদিনের মত নিত্যদিনের রুটিনের কাজ কর্ম অনুসারে আয়ান এবং অবন্তির কেটে যায় সেই দিনটিও। ওই ঘটনার পর সেদিন আর লজ্জায় কেও কারোর সাথে দেখা করে নি। রাত পেরিয়ে আবার চলে আসে পরের দিন৷ সকালে খাবার শেষ করে অবন্তির মা প্রতিদিনের মত হাতের কাজে ব্যাস্ত হয়ে যায়। অবন্তির আব্বুও সেই সকালেই বের হয়ে গিয়েছে গাড়ি নিয়ে৷ অবন্তি আর আয়ান গিয়ে অবন্তির রুমে ঢুকে। বড় রাজ প্রাসাদের ভেতরে ছোট্ট রাজ প্রাসাদ টি হলো অবন্তির ঘর। আজ অবন্তির মাঝে একটা অন্য রকম চতুরতা কাজ করছে। আয়ান গিয়ে অবন্তির খাটে বসে৷ অবন্তি গিয়ে টেবিলে বই রেখে চেয়ারে বসে পরে। বসেই আয়ান কে বলে 
- আজকে আমার পড়তে ইচ্ছে করছে না। 
-- কেনো ? 
- জানিনা। আজ তোমার সাথে গল্প করবো। 
-- আচ্ছা আমরা কি কোন রিলেশনে জড়াচ্ছি?
- বলা যেতে পারে রিলেশন।
-- কিন্তু অবন্তি আমি তো কোন রিলেশনে জড়াতে চাচ্ছি না। 
- কেনো ? 
-- সামনে তোমার পরিক্ষা এখন এসব চলবে না। 
- এত্ত পরিক্ষা পরিক্ষা করো কেনো হুম? 
-- তো কি করবো হুম?
- একটু প্রেম করতে কি হয় হুম?
-- নাহ। যদি তুমি পড়াশোনা করে ভালো রেলজাল্ট করতে পারো তবেই আমি রিলেশন করবো। 
- আমি চেষ্টা করবো।তবে তুমি কিন্তু অন্য কারোর কথা কখওই ভাবতে পারবেনা বলে দিলাম৷ 
-- আচ্ছা৷ কিন্তু আমার এখন কিছুশর্ত আছে । 
- আবার কি শর্ত?
-- তোমার পরিক্ষার এ কদিন একদম আমরা অচেনা হয়ে থাকবো দুজন দুজনের কাছে। শুধু পড়াশোনাই হবে আমাদের সম্পর্ক। 
- একটু প্রেম করতে পারবো না?
-- নাহ একদমি না। 
- আচ্ছা তাহলে আমারো একটা শর্ত আছে। 
-- তোমার আবার কি শর্ত?
- দেখো তোমাকে আমি প্রথম প্রপোজ করেছি বলে কিন্তু তুমি একদম ভাব নিবা না আমার কাছে। প্রপোজ যেই করুক আগে আমরা তো দুজন দুজনকে ভালোবাসি এটা সব থেকে বড়৷ 
-- হুম বুঝলাম। শর্ত কি এটাই?
- নাহ শর্ত এটা না। 
-- তাহলে?
- শর্তটা হলো আজকে আমি পড়বোনা । 
-- তাহলে?
- প্রথমত এখন আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরবো । তারপর দুজন দুজনের স্বপ্নের কথা শুনবো। 
-- এ নাহ। এটা ঠিক না৷ বিয়ের আগে একটা যুবক যুবতিকে টাস করাই ঠিক না৷ আর তো জড়িয়ে ধরা। 
- পারলে ঠেকাও। ( এই বলেই অবন্তি জড়িয়ে ধরে হাসতে থাকে। ও যেনো কোন এক বিশেষ অধিকার ফলায় আয়ান এর উপরে। ) 
-- আয়ান শুধু দাঁড়িয়ে আছে। 
- তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরবানা?
-- নাহ মানে?
- নাহ মানে কি? কোন মানে টানে জানতে চাইনা৷ আমাকে জড়িয়ে ধরো বলতেছি। 
-- আয়ান কথা না বাড়িয়ে আলতো করে জড়িয়ে নেয় অবন্তিকে । 
- সারাজীবন আগলে রাখবা তো?
-- চেষ্টা করবো। 
- মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে। আর তুমিও পারবে। আর শোন খুব দ্রুত কিছু একটা করার চেষ্টা করবা যেনো আব্বু আম্মু তোমাকে মেনে নেয়।
-- চেষ্টা করবো।
- কিসের সেই তখন থেকে চেষ্টা করবো চেষ্টা করবো করতেছো। আচ্ছা আয়ান সত্যি করে বলবা কোন বিশেষ কারণ বসত আমার সাথে অভিনয় করছো নাতো?
-- নাহ । তা কেনো করবো হুম ? 
- তোমার প্রতিটা কথার উত্তর গুলো কেমন যেনো ২/৩ টা শব্দের হচ্ছে। ঠিক যেমন টা মানুষ অনাগ্রহ দিয়ে কিছু শুনতে গেলে বা করতে গেলে বলে তোমার ক্ষেত্রেও আমি তেমন একটা শুর দেখতে পাচ্ছি৷ 
-- আরে ধুর কি যে বলো না তুমি। 
- আমি এত কিছু জানিনা আয়ান। শুধু একটা কথা শুনে রাখো আমি রাগ উঠে গেলে কি করে ফেলি নিজেও জানিনা। তাই বলছি আমার সাথে অন্তত এমন কিছু করতে যেও না যেনো আমার খুব খারাপ কিছু করতে বাধ্য হওয়া লাগে। 
-- আচ্ছা তাই হবে। ( তখনো দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। এরপর আসতে করে ছেড়ে দেয় আয়ান অবন্তিকে। কিন্তু অবন্তির যেনো কোন এক অজানা সুখের সন্ধান পেয়েছে। সে আয়ানকে জড়িয়ে ধরেই আছে৷) কি হলো এখন তো ছাড়ো? 
- আরেক টু ধরে রাখিনা?
-- নাহ আর না অনেক হয়েছে। 
- আচ্ছা যাও ছেড়ে দিলাম। কিন্তু এখন চলো না বসে একটু গল্প করি। 
-- জ্বি নাহ মহারানি আপনার পরিক্ষা সামনে৷ চলেন পড়তে বসতে হবে। 
- পারবোনা। বললাম না আজকে মনের সব খায়েস মিটিয়ে কাল থেকে পড়বো৷ 
-- তা আপনার কি কি খায়েস আছে মনে?
- এখন দুজন হাত ধরে বসে বসে গল্প করবো। 
-- আজকেই কিন্তু শেষ। 
- আচ্ছা ঠিক আছেরে বাবা। বললাম তো আজকেই তো শেষ।
-- আচ্ছা বলো কি গল্প করবা?
- আচ্ছা আয়ান তোমার ইচ্ছের কথা কি?
-- একটা সময় অনেক স্বপ্ন দেখতাম । কিন্তু এখন আর দেখিনা। গত পরিক্ষাটা আমার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। আগে স্বপ্ন দেখতাম একদিন অনেক বড় একটা চাকরি করবো। আব্বু আম্মুর পছন্দে একটা বিয়ে করবো৷ এরপর পরিবারের সবাই মিলে হাসি আনন্দে থাকবো। আর খুব সুখে থাকবো আমরা। 
- আর এখন কি স্বপ্ন দেখো তাহলে?
-- এখন স্বপ্ন দেখি এভাবেই কাজ করে খাবো। মানুষের বাড়িতে কাজ করবো৷ খাবো। এরপর যেদিন মেয়াদ ফুরিয়ে আসবে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবো। 
- এ কুত্তা তোর স্বপ্নে আমি কই?
-- এখনো তোমাকে নিয়ে তেমন কিছু ভাবিনি। 
- কেনো? 
-- ভাববো তোমার পরিক্ষার পর। তার আগে না। 
 - আমার পরিক্ষার সাথে কিসের সম্পর্ক শুনি?




Share This :
  আল-ফাত্তাহ্

আমি একটি সাধারণ পরিবারের, অতি সাধারণ ছেলে। লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। এবং আরো ভালো লাগে যদি আমার লেখা পড়ে কেও উপকৃত হয়৷