MASIGNCLEAN101

মনিবের মেয়ে। পর্ব ০১। ভালবাসার গল্প। Love Story.

ভালবাসার গল্প, Love Story,ভালোবাসার গল্প,ভালোবাসা,ভালবাসা,valobasar golpo
Love Story 


আয়ান সদ্য Hsc পরিক্ষা দিয়েছে। আজ তার রজাল্ট দিয়েছে। আয়ান অত্র এলাকার একটি মাত্র ভালো ছাত্র। তাছাড়াও আরো অনেকেই পরিক্ষা দিয়েছে তাদের এলাকা থেকে। সবাই মোটামুটি ভাবে পাশ করে গেছে৷ অথচ আয়ান কেনো জানিনা পাশ করতে পারেনি। অথচ তার প্রতিটা পরিক্ষা খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে একটা সাবজেক্ট এ তার রেজাল্ট খারাপ এসেছে। বাড়ির সবার মন খারাপ। তার পরিবার একটি শিক্ষিত পরিবার। তাই সমস্যা টা একটু বেশিই। বিশেষ করে সমাজের মানুষ বিভিন্ন কথা বলছে। আশেপাশের মানুষ তাকে নিয়ে অনেক কানাঘুষো শুরু করেছে। তার বাড়ির লোলজন লজ্জায় বাড়ি থেকে বের হতে পারতেছেনা। কারণ একটাই আয়ান এরকম একটি শিক্ষিত পরিবারের ছেলে হয়ে কিভাবে করলো এই কাজটি।কেনো ফেইল করলো সে একটি বিষয়ে? 


অবশেষে তার বাবা সিদ্ধান্ত নিলো তাকে বাড়ি থেকেই বের করে দিবে। তার বাবা এক কথার মানুষ। একবার যেটি বলবেন সেটিই তিনি করবেন৷ যেখানে তার বাবা একটা সিদ্ধান্ত নিবে সেখানে অন্য কারোর কোন কথা বলার সুযোগ নেই৷ এতে তার অবস্থা খারাপ আছে। আয়ানকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে শুনে আয়ানের মার মনে হচ্ছে বুকের পাজর থেকে কেও কলিজা টা টান দিয়ে ছিড়ে নিচ্ছে। তিনি নিরবে কাদছেন আর ভাবছেন কোথায় যাবে ছেলেটা? কি করবে ছেলেটা? তার তো কাজ করার অভ্যাস নেই? বিভিন্ন ভাবনায় ব্যাকুল তিনি। আয়ান ঘরে শুয়ে শুয়ে কাদছিলো। আর আয়ানের বাবা আয়ানকে ডেকে সত্যি সত্যি বের করে দিলেন বাড়ি থেকে৷ আয়ান যখন চোখের পানি মুছতে মুছতে গেইট দিয়ে বের হয়ে গেলো ঠিক তখন আয়ানের মা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটে পড়লেন। সাথে সাথে পারিবারিক ডক্টর কে খবর দেওয়া হলো । ডক্টর এসে একটা ইনজেকশন দিলেন আর ১ দিনের ঔষধ দিয়ে গেলেন। 


এদিকে আয়ান বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর মেইন রোডে উঠে হেটেই চলেছে। গন্তব্য কোথায় নিজেও জানেনা। দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকেই যেতে হবে৷ কিন্তু প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে বাকি পথটা চলা অনেক কষ্ট কর হয়ে যাচ্ছে আয়ানের। সকাল থেকে রেজাল্ট এর চিন্তায় কিচ্ছু খায়নি ছেলেটি। এদিকে আবার রেজাল্ট খারাপ আসায় আরো খাবার জুটলো না তার। এখন থেকে হয়তো আর আম্মুর সাতের রান্না সে আর পাবে না কখনো৷ কিন্তু সে কখনোই আম্মুর হাতের রান্না ছাড়া ভাত খেতো না। ক্ষুধা পাগল ছেলেটি রাস্থার ধার দিয়ে হেটেই চলেছে। এদিকে ক্ষুধায় তার হাটার ক্ষমতাটাও যেনো ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে। কি কিরবে বুঝতে পারছেনা সে। আজ মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবাই সার্থপর। শুধু অন্য মানুষ না মা বাবাও৷ হয়তো রেজাল্ট ভালো করলে এতক্ষন এ মিষ্টির ছড়াছড়ি হয়ে যেতো। অথচ একটা সাবজেক্ট এ ফেইল আসায় তাকে বাড়িতেই থাকতে দিলো না। তার মনে হচ্ছে সে ফেইল করেনি কোথাও কোন ভূল হচ্ছে৷ কইন্তু এখন আর কিচ্ছু করার নেই। 


আয়ান রাস্তার ধার বেয়ে মাথাটা নিচু করে হাটছে এর ভাবছে আর জীবনে মরে গেলেও সে ওই বাড়িতে পা দিবে না। কিন্তু এখন সে কি করবে? কোথায় যাবে সে?এমন সময় একটি ঢাকাগামী বাস এসে থামলো আয়ানের সামনে। বাসটি লোকাল বাস। সম্ভবত কোন যাত্রী নামবে। কারণ উঠার মত কোন পাব্লিক ছিলো না তখন একমাত্র আয়ান ছাড়া। এমন সময় আয়ান একটু চালাকি করে বাসের কাছে গিয়ে ভেতরে না উঠে ছাদে উঠে। কারণ তার কাছে কোন টাকা ছিলো না। তাই সে ছাদে উঠে বাসে। বাসের ছাদে উঠে সামনের দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে বসে আছে ছেলেটি। আজ কেমন যেনো পৃথিবীটা বড় অদ্ভুত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীতে সবাই সার্থপর। কেও কারো নয়। আর দুচোখ বেয়ে আপনা আপনি গড়িয়ে পড়ছে পানি। কি করবে সে বুঝতে পারছে না। এখন কোথায় যাবে সে? এখন মনে হচ্ছে যদি এতদিন তার বাবা মা তার পড়াশোনার দায়িত্ব টা না নিয়ে তাকে মাঠে কাজ করানো শেখাতো বা ছোট থেকেই তাকে কোন কাজে দিয়ে দিতো তখন হয়তো বাড়ি থেকে বের করে দিলেও সে কাজ করে ক্ষেতে পারতো। ধ্যানে পরে যায় সে। তার এখন মনে পড়ে অনেক সৃতি। একটা সময় যখন গাড়ি কোষে ব্রেক করে আর হেলপার গাবতলি গাবতলি বলে ডাকা শুরু করে ঠিক সেই সময় টাতেই ঘোর ভাঙে তার। 


বাস থেকে নামার সাথে সাথে বাসের হেলপার তার কাছে দৌড়ে চলে যায়। এবং গিয়ে ভাড়া চায়। কিন্তু আয়ান তো কোন টাকা নিয়ে যায় নি৷ যার ফলে সে বলে ভাই আমার কাছে কোন টাকা নাই। কিন্তু হেপ্লার সেটা মেনে নেয় না। কারণ দেখিয়ে বলে তোর জায়গায় যদি আরেকজন কে আনতাম তাহলে ২০০/২৫০ টাকা পেতাম এবং আরো বলে তাড়াতাড়ি টাকা দে কই থেকে দিবি জানিনা। আয়ান এসময় ভিষন অসহায় হয়ে পড়ে। কি করবে বুঝতে পারতেছেনা। এদিকে হেল্পার ও তাকে ছাড়তেছে না। একসময় আয়ান তাকে খুব বেশী রিকুয়েস্ট করতে গেলে হেলপার রেগে গিয়ে তাকে একটি কোষে থাপ্পর দেয়৷ এবং থাপ্পরের শব্দের সাথে সাথে সাথে অনেক মানুষ সেখানে জড় হয়ে হয়ে যায়। এমন সময় একজন ট্রাক ড্রাইভার দৃষ্যটি দেখে ট্রাক থেকে নেমে এসে হেলপারকে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে? শোনার পর তিনি হেলপার কে কোষে একটা থাপ্পর লাগায়। আর বলে বিয়াদব ছেলেটির কাছে টাকা নাই ছেলেটি তো তোকে বলেছে৷ এই নে ৫০০ টাকা। এই বলে তিনি আয়ানের হাত ধরে আয়ানকে নিয়ে যান তার গাড়ির কাছে৷ এবং আয়ানের দিকে তাকি বুঝতে পারেন ছেলেটা কিচ্ছু খায়নি সারাদিন। তখন প্রায় সন্ধ্যা৷ এরপর তিনি আয়ান এর সাথে কোন কথা না বলেই আয়ানের হাত ধরে আয়ানকে টেনে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিতে মাংস দিয়ে ১ প্লেট ভাত খাওয়ায়৷ এরপর তিনি আয়ানকে জিজ্ঞাসা কিরেন কোথায় যাবে তুমি? বলে আমার কোন যাওয়ার যায়গা নেই। কথাটা শুনে তিনি আয়ানকে বলেন আমার সাথে এসো৷ এই বলে আয়ানকে নিয়ে তিনি গিয়ে তার গাড়িতে উঠেন। এবং আয়ানকেও তার সাথে নেয়৷ তিনি বলেন এবার বলো আসল ঘটনা কি?


আয়ান ও কথা না বাড়িয়ে বিস্তারিত বলে সেই ড্রাইভারকে৷ ট্রাক ড্রাইভার কথাগুলো শুনে বুঝতে পারে আয়ানের ব্যাপারে। এবং আয়ান কেমন পরিবার সেই সম্পর্কেও ধারণা পেয়ে যান৷ তিনি আয়ানের কথা শুনছেন আর গাড়ি চালাচ্ছেন। এমন সময় আয়ান বলে আচ্ছা কাকা আমাকে কোন কাজ দিতে পারবেন?ড্রাইভার কাকা আয়ানের কথা শুনে একটা মুচকি হেসে বলে কি কাজ পারো তুমি? কি কাজ করবা?আয়ান থমত খেয়ে বলে আমি তো তেমন কোন কাজ পারিনা। এমন সময় ড্রাইভার কাকা বলেন তাহলে কি কাজ করবা তুমি?আচ্ছা শুনো তোমার কোন কাজ করতে হবে না৷ রাগ কমে গেলে বাড়িতে চলে যেও। ততদিন আমার বাসায় থাকবে চলো। আয়ান বলে নাহ কাকা আমি মরে গেলেও আমার লাস ও আর ওই বাড়িতে, যাবে না। আপনি আমাকে ওই বাড়িতে যেতে বলবেন না। ড্রাইভার কাকা- আচ্ছা আমার বাড়িতে বলো তারপর দেখা যাবে। এখন তো চলো। এরপর দুজনে আরো গল্প করতে করতে প্রায় মধ্যরাতে তারা ড্রাইভার কাকার বাড়িতে গিয়ে পৌছে। এরপর ড্রাইভার কাকা গাড়ি গেইট দিয়ে ঢুকিয়ে সোজা গ্যারেজ করে। বাড়ির সামনে একটি বিশাল যায়গা গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য৷ সেখানেই গাড়ি গ্যারেজ করে। এবং গাড়ি গেরেজ করে গুজনেই নামে। নেমে ড্রাইভার কাকা আয়ানকে নিয়ে বাড়ির সামনে যায়। আয়ান বাড়ির সামনে গিয়ে অনেকটা অবাক হয়ে যায়। বাড়িটা ফ্ল্যাট বাড়ি। বাড়ির বাইরে বিভিন্ন ভিন্ন ভিন্ন কালারের লাইট লাগানো। অন্ধকারের মধ্যে অসাধারন লাগছে বাড়িটা। এরপর ড্রাইভার কাকা মা মা বলে দুটি ডাক দেয়। ডাক দেওয়ার ১ মিনিট না যেতেই একটি মেয়ে এসে গেইট খুলে দেয়। সামান্য অন্ধকারের মধ্যে মেয়েটা যেনো একটা জোনাকি পোকা। জোনাকি পোকার মতই যেনো মেয়েটার শরির থেকেও আলো বর্ষিত হচ্ছে৷ 


ড্রাইভার কাকা-- কিরে মা তোর মা ঘুমিয়ে গেছে?
মেয়েটা-- হ্যা আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে গিয়েছে। আব্বু ও কে?
ড্রাইভার কাকা-- চল মা ভেতরে চল তার পর বলছি এ কে?আয়ান এটা আমার মেয়ে। ওর নাম অবন্তি। 

আগামী পর্ব পেতে সাথেই থাকুন। আগামী ২ দিনের মধ্যেই আগামী পর্ব পাব্লিশ করা হবে।    



Share This :
  আল-ফাত্তাহ্

আমি একটি সাধারণ পরিবারের, অতি সাধারণ ছেলে। লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। এবং আরো ভালো লাগে যদি আমার লেখা পড়ে কেও উপকৃত হয়৷